পরীক্ষায় কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে, কিন্তু তাতে কি প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হবে?

0

 শিক্ষা ডেস্ক★  বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস অনেকটা মহামারীর রূপ নিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায় থেকে শুরু করে, মেডিকেলে ভর্তি, বিসিএস পরীক্ষা এমনকি দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। একটি পুরো জেলার ১৪০ টি স্কুল এক সাথে বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো।
এই প্রেক্ষাপটে, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে কোচিং সেন্টারগুলোকেই ব্যাপকভাবে দায়ী করা হচ্ছে।
কিন্তু এর সাথে সরকারী ছাপাখানা ও শিক্ষকরাও জড়িত বলে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। তাহলে শুধু কোচিং সেন্টার বন্ধ রেখে প্রশ্ন পত্র ফাঁস কতটা রোধ করা যাবে?
শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন জানিয়েছে তাদের তদন্তে কোচিং সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিশেষ প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাই এই ব্যবস্থা।
তিনি বলছেন, “দেখা গেছে সকাল বেলা নেটে প্রশ্নের কিছু অংশ এক বা একাধিক ব্যক্তি ছেড়ে দিচ্ছে। তদন্ত করে দেখা গেছে কোচিং সেন্টারের কেউ কেউ জড়িত এবং গত একটা পরীক্ষায় সেটা প্রমাণও হয়েছে। তাদেরকে আমরা গ্রেফতারও করেছি। সকল কোচিং সেন্টার এমন করে তা নয়। কেউ কেউ করে। তাই পরীক্ষাটা যাতে সুষ্ঠুভাবে করা যায় তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে”
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে কোচিং বাণিজ্য জড়িত এমন অভিযোগ এর আগেও তোলা হয়েছে। এমন অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা টিআইবিও। দুর্নীতি দমন কমিশন সম্প্রতি ৩০ টি কোচিং সেন্টারকে তলব করেছিলো। কোচিং বন্ধে সরকারকে তারা সুপারিশও দিয়েছে।

প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভছবির কপিরাইট.
Image captionপ্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িতরা অবশ্য বলছেন তাদেরকে অযথা টার্গেট করা হচ্ছে।
ঢাকার আজিমপুরের কোচিং সেন্টার প্রত্যাশার ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতদের একজন খন্দকার ইমরান সাবেরিন বলছেন, “যেভাবে আমাদের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে তা কতটুকু অথেনটিক তা আমি জানি না। কোচিং সেন্টার যে জড়িত সেটা একটা অমূলক বিষয়। অনেক গোপনীয়তার সাথে প্রশ্নগুলো করা হয়। অনেক সাবধানতার সাথে এটা আসে। পরীক্ষা শুরুর পনেরো মিনিট আগে আমরা সেটা খুলতে পারি। তাহলে কোচিং সেন্টারগুলো কিভাবে এটা আউট করে?”
তিনি আরো বলছেন, “যারা এটার সাথে জড়িত, যারা প্রশ্নটা প্রসেস করছে, যারা বোর্ড থেকে সাপ্লাই দিচ্ছে অর্থাৎ সেন্ট্রালি যারা জড়িত তারা এটার সাথে জড়িত হতে পারে। এটা আসলে নিজেদের ব্যর্থতা আমাদের উপরে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক আব্দুল মালেক অবশ্য মনে করেন যে শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিং সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠান স্কুলের বিকল্প হয়ে দাঁড়ায় সেটিই আসলে নজর দেয়া দরকার। শুধু কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাবে তা তিনি মনে করেন না। তিনি বলছেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে কিন্তু সেই দায় শুধু কোচিং সেন্টারের উপরে দেয়া হলে বন্ধ হবে না। তারাও হয়ত একটি কারণ কিন্তু এটা একটা ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে সংঘবদ্ধ একটি দল কাজ করছে। এটিকে সমূল উৎপাটন করতে হলে এর সব কারণগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে”
প্রশ্নপত্রে ফাঁসে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল প্রশ্ন তৈরির সাথে জড়িত শিক্ষক ও সরকারি ছাপাখানার কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও। তাহলে শুধু কোচিং সেন্টার বন্ধ রেখে প্রশ্নপত্র ফাঁস কতটা রোধ করা যাবে?
শিক্ষাসচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন বলছেন, “বিজি প্রেসে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল। সেখানে ২২৮ জন লোক প্রশ্ন ছাপাবার সময়ে প্রশ্ন দেখার সুযোগ পেতেন। আমরা সেই সংখ্যাটি ১৮ জনে নামিয়ে এনেছি অটোমেশনের মাধ্যমে। এই ১৮ জনকেও আমরা সিসি ক্যামেরা থেকে শুরু করে তাদের টেলিফোন সহ সমস্ত কিছু আমাদের বিভিন্ন এজেন্সি প্রতিমুহূর্তে তদারকি করছে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে বিজি প্রেস থেকে আর এ সম্ভাবনা নেই। বা হচ্ছে বলে কোনো ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি না।”
আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২৪ তারিখ পর্যন্ত চলবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন পত্র ফাঁস ঠেকাতে আরো বেশ কটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর অন্তত আধাঘণ্টা আগে আসনে বসতে হবে। কোন স্মার্টফোন পাওয়া গেলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা হবে। এমনকি পরীক্ষার সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা যায় কিনা সেটিও চিন্তা করছে সরকার।
সূত্র*৯ জানুয়ারি ২০১৮

Share.

Leave A Reply