রাজাপুরে অনাবৃষ্টিতে রবিশস্যের ফলন কমার আশঙ্কা

0

মুনায়েম খান, রাজাপুর : ঝালকাঠির রাজাপুরে অনাবৃষ্টিতে পানি সংকটের কারনে লোকশানের মুখে পড়েছেন ফুড-তরমুজসহ রবি মৌসুমের বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষীরা। প্রচন্ড রোদ আর অনাবৃষ্টির এবং খাল বিলে পানি কমে যাওয়ায় ফসলের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়েছে। এতে ফুড-তরমুজ সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের গাছ শুকিয়ে গেছে। এসব কারনে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভবন নয় বলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রমতে, এ উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুক্তাগড় ও মঠবাড়ি ইউনিয়নে আবাদ বেশি। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার একেশ^ারা ও বামনকাঠি এ দুই গ্রামে প্রায় ২৫ বিঘা জমির রবিশস্য পানির অভাবে রোদের তাপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকার কৃষকরা কয়েক লাখ টাকা লোকশানের মুখে পড়েছেন।
বামনকাঠি ও একেশ্বারা গ্রামের শাখাওয়াত ফরাজি, আজিজ হাওলাদার, খলিল হাওলাদার, দেলোয়ার হাওলাদার ও এনামুল হোসেনসহ একাধিক কৃষক বলেন, কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক,আশা, গ্রামিন ব্যাংক, শক্তি ফাউন্ডেশন ও ক্রোমতসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে বিভিন্ন পরিমানে লোন নিয়ে তারা এ বছর ১০ বিঘা জমিতে ফুট (বাঙ্গি), ৪ বিঘা জমিতে সূর্যমুখি, ৪ বিঘা জমিতে তিল, ২ বিঘা জমিতে মুগ ডাল, ১ বিঘা জমিতে ছোলা, ১৫ কাঠা জমিতে ডেঢ়শ (বেন্ডি), ৫ কাঠা জমিতে মরিচের চাষসহ অন্যান্য রবিশস্য চাষ করা হয়েছে।
কৃষকরা প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ঠিকমতো সময় বৃস্টি হলে ভালো ফলন হলে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ফসল উৎপাদন হতো। কিন্তু এবছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজাপুরে কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের গাছ বৃদ্ধি হয়নি। ফুল ও ফল রোদের তাপে ঝরে পড়ে গিয়েছে। ফলন যাহা হয়েছে তাও পুষ্টিকর হয়নি। কাছাকাছি খাল না থাকায় সেচের ব্যবস্থাও করা সম্ভব হয়নি। শেষ সময়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে মূলত উচু এলাকা নির্বাচন করা হয় ফুড তরমুজসহ রবিশস্যের জন্য। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়া এবং আশপাশের নালা শুকিয়ে যাওয়া কাছাকাছি পানি না পাওয়ায় পরিমান মত পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই কাঙ্খিত ফলন উৎপাদন হয়নি। যে ফলন হয়েছে তাতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পাওয়া যেতে পারে।
এ বছর ওই এলাকার কৃষকদের লাখ লাখ টাকা লোকশান গুনতে হবে বলে তারা আরো জানান। লোকশান পুষিয়ে উঠতে ওই এলাকার কৃষকরা সরকারের কাছে বিশেষ প্রণোদনা পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ওই এলাকার কৃষক সাখাওয়াত ফরাজী বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের আওতায় কোন প্রদর্শনী ক্ষেত করলে সে বিষয়ে মোটামুটি খোজ খবর নেন কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে কৃষি চাষ করলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোন যোগাযোগ করেন না। গত বছরে আমার প্রায় ১৩ বিঘা জমির রবিশস্য জোয়ারের পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু কৃষি কর্মকর্তারা একবারও খোজ নেয়নি। এবারেও আমার প্রায় ১৪ বিঘা জমির রবিশস্য রোদের তাপে ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত কোন খোজ খবর নেয়নি উপজেলা কৃষিকর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, কৃষকদেরকে ফসলের শত্রু পোকা নিধন ও প্রয়োজনিয় সেচের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই এলাকায় কাছাকাছি খাল না থাকায় তুলনামুলক ফসল উৎপাদন কম হতে পারে। উপজেলায় সার্বিক দিক থেকে এ বছর আবাদ বেশী হয়েছে এবং গত কয়েক বছরের তুলনা ফলনও ভালো হয়েছে। এ বছর জোয়ারের পানিও দেড়িতে এসেছে। পর্যাপ্ত সেচের অভাবে দু’এক জায়গায় সমস্যা হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্থরা স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করলে যাচাই বাছাই করে তাদেরকে প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে বলে তিনি বলেন। তিনি আরো জানান, উপজেলায় এবছর মোট ৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে ফলনও ভালো হয়েছে।

Share.

Leave A Reply