স্বাধীনতা ও বিজয় আল্লাহর দানঃআবদুর রশিদ

0

স্বাধীনতা আল্লাহর দান। কারণ তিনিই একমাত্র দাতা। স্বাধীনতা একটি কাঙ্ক্ষিত ও কাম্য বিষয়। মানুষ জন্মগ্রহণ করে স্বাধীন অবস্থায়। সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া কারও গোলামি করতে সে বাধ্য নয়। আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ পাঠিয়েছেন তার প্রতিনিধি হিসেবে। এক মানুষ আরেক মানুষকে শৃঙ্খলিত করবে তা মহান আল্লাহর দেওয়া বিধান নয়। আল্লাহ পৃথিবীর সব এলাকাকে স্বাধীনরূপে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে নির্দিষ্ট জনগণকে পাঠিয়েছেন। সুতরাং অন্যের প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীনভাবে সেখানে বসবাস এবং যাবতীয় জীবনোপকরণ ভোগ-ব্যবহার করা মানুষের জন্মগত অধিকার। যেখানে অন্য কারও হস্তক্ষেপ অন্যায়, অপরাধ ও জুলুমের শামিল।

আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য নিরলস চেষ্টা চালানো সব নাগরিকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

মহান আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-কে প্রেরণের আগে বলেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা তথা প্রতিনিধি পাঠাব। ’ সব নবী-রসুল নিজ জন্মভূমি ও দেশকে ভালোবাসতেন। জন্মভূমির প্রতি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা ছিল তুলনাহীন। স্বদেশের জন্য গভীর টান ও মায়া-মমতা প্রকাশ পেয়েছে হজরত নুহ, ইবরাহিম, ইয়াকুব, মুসা (আ.)-সহ অনেক পয়গাম্বরের জীবন ও আচরণে।

বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্মভূমি ফিলিস্তিনের হেবরন। আল্লাহ-প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে তিনি মক্কায় অবস্থান করতেন। কাজ শেষে নিজ দেশে ফিরে আসতেন। পবিত্র কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ, ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানি, মক্কাকেন্দ্রিক দাওয়াত প্রচারের জন্য আল্লাহর হুকুমে তিনি সপরিবারে যখন মক্কায় বাস করতেন তখন তার চিন্তা-চেতনা ও দোয়া-প্রার্থনায় এই জনপদের প্রতি গভীর আগ্রহ, প্রেম ও ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে। সূরা বাকারায় তার এমন একটি দোয়ার কথা উল্লেখ আছে যখন ইবরাহিম (আ.) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীকে নিরাপদ রাখুন এবং এর অধিবাসীদের ফল-ফসল থেকে রিজিক দান করুন, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে। ’

আল্লাহ বললেন, ‘যারা অবিশ্বাস করে, আমি তাদেরও ওই রিজিক দান করব তারপর জাহান্নামের আজাবে ঠেলে দেব; সেটা নিকৃষ্ট বাসস্থান। ’ (সূরা বাকারা : ১২৬)।

ইসলামের ইতিহাস পাঠে আমরা দেখতে পাই, পূর্বসূরি মনীষীরা স্বদেশ ও স্বজাতিকে নিজের সন্তান-পরিজনের মতো ভালোবাসতেন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের অনেক সদস্য, ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), মুহাম্মদ বিন কাসিম, সাইয়েদ আহমদ শহীদ, ইসমাইল শহীদ, মীর নিসার আলী তিতুমীর, টিপু সুলতানসহ অসংখ্য মুসলিম নেতা দেশের স্বাধীনতা, মানুষের ধর্মীয় ও জাগতিক অধিকারের জন্য জীবন দান করে গোটা উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আরবিতে একটি স্বতঃসিদ্ধ বাণী আছে ‘হুব্বুল ওয়াতান মিনাল ইমান’। দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। জন্মভূমি মক্কা মুকাররমার প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপরিসীম ভালোবাসার কথা কে না জানে।

তাকে যখন প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকেরা হিংস্রতা ও চরম নিষ্ঠুরতায় মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করল, তিনি পবিত্র মদিনার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তখন পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকাচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে মক্কা! প্রিয় জন্মভূমি আমার! যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বাধ্য না করত আমি কোনো দিন তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। ’ দায়িত্বের চাপে অনেক মানুষ পরদেশে গিয়েছেন বা জীবন অতিবাহিত করেছেন, কিন্তু নিজ দেশের প্রতি তাদের কর্তব্য পালনে কখনো উদাসীন ছিলেন না।

আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। দেশ গঠন, এর উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য চিন্তা, পরিকল্পনা ও কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য দেশপ্রেমের বিকল্প নেই। প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ স্থান থেকে দেশের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও সুনামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করতে হয়। আর এই মানসিকতা সৃষ্টির অন্যতম উপাদান হলো স্বদেশপ্রেম।

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

Share.

Leave A Reply