২৪ভ্রমণ সংবাদ★★ গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চর বিজয় (হাইরের চর) অপার সম্ভাবনাময় পর্যটনস্থল। চারদিকে শুধু পানি আর পানি মাঝখানে একটি দ্বীপ। দ্বীপটির আয়তন আনুমানিক ৫ হাজার একর। যেন সমুদ্রে সৌন্দর্যের জৌলুশ বয়ে চলছে। লাল কাঁকড়া আর লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখির বিচরণে আকাশ আর চর মিলে একাকার হয়ে থাকে। দূর থেকে প্রত্যেক ভ্রমণ পিপাসুর নজর কাড়ে দ্বীপটি। কুয়াকাটা থেকে পূর্বকোণ গঙ্গামতি দিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এ চরটি।
এ দৃষ্টি নন্দিত চর বিজয়ের চার পাশে জেলেরা মাছ শিকার করছে অস্থায়ীভাবে সেখানে বাসা বানিয়ে। মাছ শিকার করে বিক্রী বা শুঁটকি তৈরী করছে অনেকে। কুয়াকাটার পর্যটনকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে নতুন স্থানের সন্ধানে বের হয় কুয়াকাটা সী ট্যুরিজম। ঘুরার পথে দেখা মেলে সৃষ্টির দৃষ্টি নন্দিত এ চর বিজয়ের। কুয়াকাটা সমুদ্র পথে আর একটি দর্শনীয় স্পট হয়ে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কুয়াকাটার ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষ।
এ যেন লাল কাঁকড়ার গালিচা। ছবি- আরিফ রহমান
দৃষ্টি নন্দিত চর বিজয় ঘুরে দেখা গেছে- পর্যটন নগরী কুয়াকাটার গভীর সমুদ্রে দক্ষিণ পূর্ব কোণে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ চরটি। স্থানীয় মাছ ধরা জেলেরা হাইরের চর বলে জানে। কুয়াকাটার সী ট্যুরিজমের উদ্যোগে ট্যুরিস্ট বোট নিয়ে গত কয়েক দিন আগে নতুনের সন্ধানে ঢাকার পর্যটক আর স্থানীয় কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকের একটি টিম বের হলে দেখা মেলে যায় এ চরটির। বিজয়ের মাসকে কেন্দ্র করে এই ভ্রমণ প্রেমিকরা ‘চর বিজয়’ নামে আখ্যায়িত করেন নতুন চরটিকে।
বর্ষার ছয় মাস এ চরটি ডুবে থাকে আবার শীতের মৌসুমে ধূ ধূ বালুর চর হয়ে জেগে উঠে। যার সাথে মিশে আছে অতিথি পাখির সমারোহ এবং চরটি জুড়ে রয়েছে লাল কাকঁড়ার বিচরণ। যেন প্রকৃতি নিপূন হাতে তৈরি করেছে চরটি। মাত্র দেড় ঘন্টায় পৌঁছানো যায় গভীর সমুদ্রের এরকম চর জেগে উঠায় কুয়াকাটায় আর একটি দর্শনীয় স্পটের মাত্রা যোগ হলো বলে মন্তব্য করছেন সেখানে যাওয়া ট্যুর অপারেটররা।
চরটি ঘুরে কুয়াকাটায় ফিরে আসা ঢাকা বনশ্রীর দম্পত্তি সীমা আক্তার (৩৪) বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি কিন্তু কুয়াকাটার সমুদ্রে মধ্যে এত সুন্দর একটি দৃশ্য দেখব কল্পনা করিনি। কি যে ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না! যেন এক অন্য ভুবন। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না আমাদের দেশে এরকম একটি চর জেগে উঠছে, এটি কুয়াকাটার জন্য আশীর্বাদ।’
ক্যাম্পিং করুন নিশ্চিন্তে। ছবি- আরিফ রহমান।
ভ্রমণ প্রেমিক কুয়াকাটা সী ট্যুরিজমের এ্যডমিন ও ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক আরিফুর রহমান বলেন, ‘প্রাকৃতিক দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করাই আমার কাজ এবং সে গুলোকে প্রচার করা দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। আজ ঘুরতে এসে যা পেলাম এ চর বিজয় স্পটটি পর্যটকদের কাছে শুধু কুয়াকাটা নয় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ট্যুরিজমের জন্য রোল মডেল হয়ে দাঁড়াবে!
কুয়াকাটা সী ট্যুরিজমের এ্যাডমিন ও কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি জনি আলমগীর বলেন, ‘আমাদের সমুদ্রের মধ্যে এত সুন্দর একটি চর জেগে আছে তা আগে জানতাম না। এটাকে এখন শুধু সরকারি বেসরকারি ভাবে আমাদের ব্রান্ডিং করে বিশ্বের কছে পৌঁছে দিতে হবে। তা হলে কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
গুগল ম্যাপে কুয়াকাটা।
চর সর্ম্পকে কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, ‘কুয়াকাটা গভীর সমুদ্রে যে চর বিজয় জেগে উঠেছে, আমি ঘুরতে এসে যা দেখলাম সৃষ্টির যে রহস্য রয়েছে তা এখানেই প্রমাণ। অজানা অচেনা লক্ষ লক্ষ পাখির কলরব আর লাল কাঁকড়ার বিচরণ আকড়ে আছে বিশাল এ চরটিকে। এসব দৃশ্য দেশি বিদেশি পর্যটকের আকৃষ্ট করবে। তাই এই চর বিজয়কে পর্যটনের আওতাভূক্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’ এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, ‘চরটির কথা শুনেছি। অনেক সুন্দর। আমিও কিছুদিনের মধ্যেই ঐ চর বিজয় পরির্দশনে যাব।’
সবমিলিয়ে ‘চর বিজয়’ এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটনস্থল। এই শীতে আপনিও ঘুরে আসুন বিজয়ের নামাংকিত অপরূপ চরটিতে। শুভ হোক আপনার ভ্রমণ।
তথ্য এবং ছবি কৃতজ্ঞতাঃ আরিফ রহমান