পারুলের চিঠি: যারা কখনও মা-কে জানেনি

0

নিজস্ব প্রতিবেদক: পেয়ে হারানোর বেদনার চেয়ে না পাওয়ার বেদনার কষ্ট কখনও কখনও অনেক বেশি। সেই বেদনার সাথে মিশে থাকে একটা অন্যরকম অধীরতা… একটা বলতে না পারা দীর্ঘশ্বাস; এমন একটা শূণ্যতা যাকে কোনও স্মৃতি বা কল্পনা দিয়ে পূরণ করা যায় না। মা দিবসে সবাই যখন মা’কে শুভেচ্ছা জানায়, অথবা স্মৃতিচারণ করে – তখন কিছু মানুষ মনের কোণে অন্যরকম একটা চাপা কষ্ট আর শূন্যতা নিয়ে সবার চোখের আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমাদের বেশিরভাগেরই মা আছে, অথবা ছিল। মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা, মায়ের হাসি, মায়ের বকুনি, মায়ের হাতের খাবার, মায়ের বুনে দেয়া সোয়েটার – বাস্তবে অথবা স্মৃতিতে আমাদের কাছে অমূল্য। মনখারাপের দিনগুলোয় মায়ের স্মৃতি অথবা স্পর্শ আমাদের ঠোঁটের কোণে এনে দেয় এক চিলতে হাসি। মনে হয় জীবনে আর কিছু পাই না পাই, মা-কে তো পেয়েছি। এমন ভালোবাসা কয়জনের ভাগ্যে জোটে? – সত্যিই, এমন ভালোবাসা সবার ভাগ্যে জোটে না।

আমাদের মাঝে এমন অনেকে আছে, যারা শুধু মায়ের অভাবনীয়, অলৌকিক ভালোবাসার গল্প শুধু রূপকথার মত শুনেছে, কিন্তু কোনওদিন পায়নি। হাজার হাজার মানুষ তাদের বুদ্ধি হওয়ার আগেই মা-কে হারিয়েছে। তারা অন্যদের মুখে মায়ের ভালোবাসার কথা শুনে, বইয়ের পাতায় মায়ের কথা পড়ে, বন্ধু-আত্মীদের মায়ের সাথে ছবি দেখে চোখের কোণে জমে ওঠা অশ্রু আড়াল করে। অবুঝ কান্নার দল অজান্তে বুকটাকে ভারী করে রাখে। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পারুলের চিঠিতে এমনই একটা গল্প উঠে এসেছে। পারুল কখনো তার মা-কে দেখেনি। মায়ের কথা তার মনে নেই। একাকী মূহুর্তগুলোতে সে আনমনে মায়ের কথা ভাবে। অজান্তেই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। যখন কোনও স্নেহময়ী নারী তার দিকে তাকিয়ে হাসে, অথবা খুব ছোট্ট কোনও ভালোবাসার প্রকাশ করে – তার মনে হয়, এটাই কী মায়ের ভালোবাসা?

এমনই একটা অব্যক্ত বেদনার গল্প নিয়ে পারুলের চিঠির উপাখ্যান লিখেছেন রোহিত হাসান কিসলু, আর এই উপাখ্যানকে ফ্রেমে বন্দী করেছেন পরিচালক জয়ন্ত রাজ।

“আমার সব সময়ই মনে হয় মা ছাড়া মানুষ ক্যামন করে বাঁচে! মা নেই যাদের, হয়ত এতিমখানায় বড় হয়েছে- জানেই না কে তার মা- এমন মানুষের অনভূতি আমাকে পীড়া দিত। এটা কেমন কথা, একটা মানুষ এই পৃথিবীতে মা এর কোন অস্তিত্বই পাবে না। তাদের জন্য গল্পটা বানানো। যাদের মা বেঁচে নেই তারাও আপ্লুত হবে গল্পটা দেখে। আর যাদের আছে, তারা নিশ্চয়ই আরো যত্নবান হবে মা এর প্রতি।সিনেমাটা সবার ভাল লাগলেই আমাদের সার্থকতা। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকার জন্য  ‘জাজ মাল্টিমিডিয়া’র প্রতি কৃতজ্ঞতা।” – ‘হাউজফুল প্রডাকশনস’র ব্যানারে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন পরিচালক।

মাত্র ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ড সময়ের এই স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্রটি দেখতে গিয়ে মায়ের মমতার অভাবকে অন্তরের গভীর থেকে অনুভব করা যায়। সঙ্গীত পরিচালক ইমন চৌধুরীর (চিরকুট) করা সঙ্গীত, হাসান জুয়েলের ক্যামেরার কারসাজি এবং মাহফুজুল হক আশিক এর অসাধারণ সম্পাদনায় দারুন এক আবহ ঘিরে রাখে পুরোটা সময় জুড়ে। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নেপথ্যকণ্ঠ দিয়েছেন লিনা আহমেদ এবং রোহিত সাধুখান। আর মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেত্রী সায়মা সেলিম আনিকা।

প্রধান সহকারী পরিচালক জান্নাতিন নাইম দীপের ভাষায়, “এমন সুন্দর একটা কাজের সাথে থাকতে পারা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা” – আশা করা যায় যারা চলচ্চিত্রটি দেখবেন, তাদের জন্যও এটা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতাই হতে যাচ্ছে।

Share.

Leave A Reply