ঝালকাঠিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমনকালে মাঠে-ঘাটে ছুটছেন প্রশাসনের ‘দুই হাসান’

0

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোভিড ১৯ যখন বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে থমকে দিয়েছে। বাংলাদেশও বাদ যায়নি এর আক্রমন থেকে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর কোনো রাস্ট্র্রের সরকারকে ঠিকমতো ঘুমোতে দিচ্ছেনা নভেল করোনা নামক এই ভাইরাসটি। দেশের এই ক্রান্তিকালে পরিবার-পরিজনের কথা না ভেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের নির্দেশনা জনগনকে মেনে চলাতে ঝালকাঠিতে দিন রাত অবিরাম মাঠে ঘাটে ছুটছেন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা। এই দুই কর্মকর্তার অবিরাম ছুটে চলা চোখে পড়ার মত। ঝালকাঠিবাসী সংক্ষেপে এদেরকে উপাধী দিয়েছেন ‘মানব সেবক দুই হাসান’। এদের একজন হলেন ঝালকাঠি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম.এম মাহমুদ হাসান আর অন্যজন জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আহম্মেদ হাসান। প্রশাসনের কর্মকর্তা এই দুই হাসানকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দেখে থাকেন ঝালকাঠির মানুষ। এরা পৃথকভাবে একজন ছুটছেন আইন- শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে, আবার অন্যজন অপরাধ দমনে ছুটছেন ভ্রাম্যমান আদালত নিয়ে। আবার কখনো দুজনেই গোপন খবরে খাদ্য সহায়তা নিয়ে করা নাড়ছেন ক্ষুধার্তদের দরজায়। সেটা কথনও দিনে আবার কখনও রাতে। দুজনেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদেরকে ফোন করে জানতে চান কার ঘরে খাদ্য সংকট আছে, কে কোন সরকারি সহায়তা পায় নি ? তারপর গোপনেই সেই অসহায় নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দেবদূতের মত হাজির হচ্ছেন দুই হাসান। পুলিশের আদর্শবান কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান নিজ অর্থায়নে ব্যক্তিগতভাবে অগনিত মানুষের ঘরে গোপনে খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়েছেন। আর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা আহমেদ হাসানকে সরকারি সহায়তা নিয়ে প্রায়ই মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে মধ্য রাতেও ছুটতে দেখা যায়।
বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার দুমকি গ্রামের স্বনামধন্য এক আলোকিত পরিবারের সন্তান এম.এম. মাহমুদ হাসান। একজন আদর্শ শিক্ষক পিতার গর্বিত সন্তান। স্কুল- কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে ২৮- তম বিসিএস এর মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। ২৮ তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে মেধা তালিকায় তিনি ২য় স্থান অধিকার করেন। এর পূর্বে ২৭ তম বিসিএস(কৃষি) ক্যাডারে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হিসেবে বরিশালের মুলাদী উপজেলায় দু’বছর চাকুরী করেন।
পুলিশের একজন নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসেবে সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ন কাজের জন্য ২০১৬ এবং ২০১৮ সনে মোট দু’বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) অর্জন করেন। এই পুরস্কারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তিনি জনগণের আইনি সেবাসহ অসহায়ের পাশে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি ২০১৯ সালে দশ বার (১০ বার) বরিশাল রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হন।
অপরদিকে চট্রগ্রাম বিভাগের বাঁশখালী উপজেলার কৃতিসন্তান আহমেদ হাসান। নাটমুরা গ্রামের পুকুরিয়া হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি, বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিষয়ে বি.বি.এ এবং এম.বি.এ ডিগ্রি অর্জন করে ৩৭-তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন প্রশাসন ক্যাডারে। বর্তমানে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে নেজারত ডেপুটি কালেক্টরের (এনডিসি) দায়িত্বে আছেন।
দুজনই বলেছেন, ঝালকাঠি জেলায় দক্ষ, যোগ্য এবং পরম মমতাসিক্ত মানসিকতার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার রয়েছেন বিধায় তারা নিরলসভাবে কাজ করতে উৎসাহ পাচ্ছেন। ঝালকাঠির বিশিষ্টজনরা বলছেন, সিনিয়র কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে যদি দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সততা থাকে তাহলে তার অধিনস্ত জুনিয়র কর্মকর্তারা পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে রাষ্ট্রের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন। এমনটাই হয়েছে ঝালকাঠির বেলায়ও। এখানকার জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী এবং পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন উভয়ের ক্ষেত্রেই দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সততা এর কোনটাই তাদের মধ্যে কমতি নেই। এ জেলার শীর্ষ রাজনৈতিক কর্মকর্তারা বলেছেন জেলার অভিভাবক ঝালকাঠি-নলছিটির সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু নিজেও সততা নিয়ে কাজ করেন। তিনি জেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনের বৈধ কোন কাজে হস্তক্ষেপ করেন না। তিনি জেলার আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে সবসময়ই ন্যায়সঙ্গত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর তাই এ জেলার ডিসি- এসপি উভয়েই নিরলসভাবে জনগণের সেবক হিসেবে সরকারের পক্ষে স্বাধীন ও বাধাঁহীনভাবে কাজ করতে পারছেন।

Share.

Leave A Reply