ঝালকাঠিতে চুল কেটে নারী নির্যাতন মামলার আসামিদের গ্রেফতার দাবি

0

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও বিএনপি নেতা মিলে এক নারীর চুল কেটে রাতভর নির্যাতন শেষে ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ দুই সপ্তাহে কোন আসামিকে গ্রেফতার করেনি বলে অেিভযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার পারভীন আক্তার। আসামিরা মামলা তুলে নিতে নানা রকম হুমকি দেওয়ায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও অভিযোগ করেন পারভীন। অবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজীপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন নির্যাতিত ওই নারী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পারভীন আক্তার জানান, শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার বোরহান উদ্দিন খান তাঁর প্রথম স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকিকে এক বছর আকে তালাক দেন। পরে তিনি গত ১০ জুলাই পারভীন আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁরা ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি জেলা পরিষদের সামনে কাদের কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় প্রথম স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজন। গত ৩০ আগস্ট সন্ধায় তাঁর স্বামী বোরহান উদ্দন খানের প্রথম স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকির ভাই ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা, তাপুর বোন সেলিনা আক্তার লাকি ও আইরীন পারভীন এ্যানি, রাখি আক্তার এবং ফাতেমা শরীফসহ ১০-১২ জন তাদের বাসায় যায়। ভেতরে ঢুকেই তারা অতর্কিতভাবে তাকে (পারভীন আক্তারকে) মারধর শুরু করে। তাঁরা ওয়্যারড্রব ভেঙে নগদ দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। পরে তাকে জোড়পূর্বক অপহরণ করে শহরের বিআইপি সড়কের হিলটন নামে আবাসিক হোটেলে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখে। রাতভর তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুন লাগিয়ে দেয়। নির্যাতন শেষে ওই নারীর চুল কেটে দেয়া হয় । এ ঘটনার ছবি তুলে রাতেই ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে কয়েকটি সাদা কাগজে সই নিয়ে তাঁর ভাই নুরুজ্জামান হাওলাদারকে ফোন করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় আসামিরা। পরের দিন দুপুরে মুক্তিপণের টাকা দিলে নির্যাতিত নারীকে প্রায় অচেতন অবস্থায় ছেড়ে দেয় আসামিরা। এ ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এ নির্যাতিত নারী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপশি বাদীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের আদেশ দেন। রাতেই পুলিশ মামলা রেকর্ড করলেও গত দুই সপ্তাহে কোন আসামি গ্রেফতারা করতে পারেনি। আসামিদের গ্রেফতর ও তাকে নিরাপত্তা প্রদানের দাবী জানিয়েছেন পারভীন আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে পারভীনের দুই বোন নাসরিন বেগম ও কহিনুর বেগম উপস্থিত ছিলেন।
পারভীন আক্তার অভিযোগ করেন, মামলা তুলে না নিলে আমার স্বামীর নামে মিথ্যা মামলা করার হুমকি দিচ্ছে বিনেপি নেতা তাপু ও আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকা। তাপুর বোনের জামাই মিজানুর রহমান বাদল যিনি নারায়ণগঞ্জের একজন যুগ্ম কর কমিশনার। তাকে দিয়ে আমার স্বামী ও আমাদের বাড়িওয়ালা কাদের মিয়াকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে তাঁদের কথা শুনে মামলা তুলে নিতে হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন মিজানুর রহমান। পাশাপাশি আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রীও এখন ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করার পায়তারা করছেন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, একাধিক আসামির বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের কাউকে বাসায় পাওয়া যায়নি। বাদীকে নিরাপত্তার জন্য আদালতের আদেশ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। বাদীর সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share.

Leave A Reply